উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
ভারতকে গ্যাস পাইপলাইন করিডর দিতে চায় বাংলাদেশ; বিনিময়ে সেখান থেকে গ্যাস পেতে চায়। এতে ভারতের নীতিগত সম্মতি রয়েছে।
মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান (দুর্গাপুর) ও শিলিগুড়িতে যাবে এ পাইপলাইন।
ইরান থেকে গ্যাস আনার জন্যও পাইপলাইন স্থাপন করছে ভারত। ওখান থেকেও গ্যাস পেতে চায় বাংলাদেশ। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ছাড়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করবে সরকার। ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের দেশি মজুদ ২০৩০ সাল নাগাদ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত জোট সরকারের আমলেই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস নিতে চেয়েছিল ভারত। বাংলাদেশ সরকারকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে ২০০৫ সালে প্রকল্পটি বাদ দেয় তারা। এরপর চীনের সঙ্গে ইউনান-আরাকান গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনে সম্মত হয় মিয়ানমার। ভারতে গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে তাদের আগে দেওয়া সম্মতি বহাল রয়েছে। এখন বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ের অলোচনা চলছে।
সূত্র জানায়, এবার মিয়ানমারের সিৎইউ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ভারতে গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপনে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে রয়েছে।
মিয়ানমারের গ্যাস পাওয়া গেলে তাদের সংকট থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মিয়ানমারের আরাকান-সংলগ্ন সাগরে দুটি গ্যাস ব্লকের ইজারাদার ভারতীয় কম্পানি ইসার। ভারত মনে করছে, দুটি ক্ষেত্র থেকে যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়া সম্ভব, তা সরবরাহের জন্য পাইপলাইন স্থাপন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। অগভীর সাগরের একটি ব্লকে (এ টু) ১৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) এবং অন্যটিতে (কেজি-ডি সিক্স) ১০ দশমিক ০৩ টিসিএফ গ্যাস মজুদ আছে বলে ধারণা। পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য হবে ছয় হাজার ৯০০ কিলোমিটার।
গত এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের জ্বালানি ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। এ গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। বাংলাদেশ ইতিবাচক মনোভাব দেখায়।
সূত্র জানায়, এ পাইপলাইন নির্মাণ করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে আসামে বৈঠক করেছেন। শিগগির দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এটি নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের অংশীদারিতে একটি কম্পানি গঠন করা হবে।
গত রবিবার ভারতের জ্বালানি ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান পশ্চিমবঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করা হবে।
গত ১৪ আগস্ট ভারতের দি ইকোনমিক টাইমসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস কম্পানি ওএনজিসির নির্বাহী পরিচালক এস সি সোনি জানান, মিয়ানমার থেকে একটি গ্যাস পাইপলাইন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গে যাবে। এটি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে গ্যাস দেওয়ার কথা ভাবছে ভারত সরকার।
ইরান থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনছে ভারত। বাংলাদেশও ইরানের গ্যাস নিতে চায়। এ জন্য বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কমিটি ইরানের গ্যাস বাংলাদেশে সরবরাহের কারিগরি ও অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করবে।
এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ (খুলনা)-পশ্চিমবঙ্গ (শিলিগুড়ি) তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। এ লাইন থেকে এলএনজি চেয়েছে বাংলাদেশ। ভারত সায় দিয়েছে। এ লাইনের এলএনজি দিয়ে খুলনায় একটি বিদ্যুেকন্দ্র পরিচালনা করবে সরকারি প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কম্পানি। কেন্দ্র নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ভারত তার কিছু রাজ্যের জন্য মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস নিতে চায়। এটি হলে বাংলাদেশ সেখান থেকে গ্যাস পাবে। এতে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা সংহত হবে।
ইরানের গ্যাস পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের গ্যাস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইরান থেকে আসা গ্যাস চেয়েছি আমরা। তারা বলেছে, একটি জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি করে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। দ্রুতই আলোচনা শুরু হবে।’ সুত্র , কালেরকন্ঠ
পাঠকের মতামত